জান্নাত কি?
জান্নাত আরবি: জান্নাহ্ (جنّة) অর্থ হল স্বর্গ, ঘন সন্নিবেশিত বাগান/উদ্যান, বাগ-বাগিচা! জান্নাত হল এমন চূড়ান্ত আবাসস্থল, যা মহান আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন যে সকল আল্লাহর বান্দাগণ তাদের পার্থিব জীবনে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলবে এবং পরকালে যাদের পাপের চেয়ে পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে! জান্নাত এমন এক স্থান যা দিগন্ত বিস্তৃত নানারকম ফুলে ফলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা সম্বলিত মনোমুগ্ধকর বাগান; যার পাশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝর্ণাধারা প্রবাহমান এবং যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান!
জান্নাত কয়টি ও কি কি?
জান্নাত অনেক, যার প্রকৃত সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না! তবে আট প্রকার জান্নাতের কথা মহাগ্রন্থ পবিত্র আল-কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে! সেগুলো হচ্ছেঃ
১) জান্নাতুল ফিরদাউস!
২) জান্নাতুন্ নায়ীম!
৩) জান্নাতুল মাওয়া!
৪) জান্নাতুল আদন!
৫) জান্নাতু দারুস সালাম!
৬) জান্নাতুদ দারুল খুলদ!
৭) জান্নাতু দারুল মাকাম!
৮) জান্নাতু দারুল কারার!
কোরআন ও হাদিসের আলোকে জান্নাতের নিয়ামত সমূহঃ
চির শান্তির স্থান হল জান্নাত! জান্নাতের বৈশিষ্ট্য ও জান্নাত কাদের জন্য পস্তুত করা হয়েছে এই সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র আল কোরআনে আনেকগুলো আয়াত নাযিল করেছেন! নিচে জান্নাত সম্পর্কে কিছু কোরআনের আয়াত বাংলা অর্থসহ দেওয়া হলঃ
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তারাই জান্নাতের অধিবাসী হবে! এই সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ
● যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়! আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন!
{সূরা হজঃ আয়াত নং ১৪}
● আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন এরশাদ করেনঃ
আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না!
এরপর তিনি বলেন; যদি তোমরা চাও, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ো! যার অর্থ হলোঃ কেউ জানে না, তার জন্য কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে!
{সহিহ বুখারীঃ ৩২৪৪; সহিহ মুসলিমঃ ২৮২৪}
জান্নাতের সংখ্যার বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
● যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দু’টি জান্নাত!
{সুরা আর-রহমানঃ আয়াত নং ৪৬}
● এই দু’টি ছাড়া আরও দু’টি জান্নাত রয়েছে!
{সুরা আর-রহমানঃ আয়াত নং ৬২}
● আনাস বিন মালিক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত; বদরের যুদ্ধে হারিসা (রাঃ) শহীদ হলেন! আর তখন তিনি তরুণ ছিলেন! তাঁর মা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এসে বললেন; হে আল্লাহর রাসূল, হারিসা আমার কত আদরের আপনি তো তা অবশ্যই জানেন! (বলুন) সে যদি জান্নাতী হয় তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করব এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা পোষণ করব! আর যদি এর অন্যথায় হয় তাহলে আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, আমি (তার জন্য) যা করছি! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ
তোমার জন্য আফসোস! অথবা তুমি কি নির্বোধ হয়ে গেলে! জান্নাত মাত্র একটাই না কি? জান্নাতের সংখ্যা অনেক! আর সে আছে জান্নাতুল ফিরদাউসে!
{সহিহ বুখারীঃ ৩৬৯৩}
● একাধিক হাদিসে এসেছে জান্নাতে প্রবেশের দরজা আটটি! যেমন; এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: তোমাদের মধ্যে থেকে যখন কোনো ব্যক্তি যত্নসহকারে সম্পূর্ণরূপে অথবা উত্তম রূপে ওজু করবে এবং বলবে-
"আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই! আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, অব্যশই মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর অতি প্রিয় বান্দা ও রাসূল!"
তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে! সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে, সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে!
{মুসলিম: ৪৪৬}
● উক্ত আট দরজার সুপ্রশস্তার বিবরণ দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
জান্নাতের দরজার দুই পাল্লার মাঝে চল্লিশ বছরের সফরের পথ!
{মুসলিম: ৭১৬৬}
জান্নাতের ব্যাপকতা ও পরিচিতি সম্পর্কে সংক্ষেপে এবং এক বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেনঃ
অতঃপর কেউ জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকায়িত আছে, তারা যা করত, তার বিনিময়স্বরূপ!
{সূরা সাজদাহঃ আয়াত নং ১৭}
জান্নাত হবে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত; এই সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ তাদেরকে সেখানে (জান্নাতে) না সূর্যতাপ জ্বালাতন করবে না শৈত্য প্রবাহ!
{সূরা দাহরঃ আয়াত নং ১৩}
জান্নাতে কোন দুঃখ-কষ্ট থাকবে না! এমনকি যাকে সবচেয়ে ছোট জান্নাত দেয়া হবে তারও কোন অনুতাপ কিংবা দুঃখ থাকবে না! এই সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ঘোষনাঃ
● তারা সেখানে কখনও কোন দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হবে না এবং কোনদিন তাদেরকে সেখান থেকে বের করেও দেয়া হবে না!
{সূরা হিজরঃ আয়াত নং ৪৮}
● (জান্নাতীগণ বলবে) তিনি আমাদেরকে নিজের অনুগ্রহে চিরন্তনী আবাসস্থল দান করেছেন এবং আমাদের কোন দুঃখ এবং ক্লান্তি নেই!
{সূরা ফাতিরঃ আয়াত নং ৩৫}
জান্নাতে স্বার্থপরতা, অহংকার, হিংসা, গীবত, ঝগড়া-বিবাদ, অশ্লীল কথাবার্তা ইত্যাদি থাকবে না! সেখানে শুধুমাত্র সম্প্রীতি ও সৌন্দর্য্যপূর্ণ উত্তম পরিবেশ বিরাজ করবে! মহান আল্লাহ তাআ'লা বলেনঃ
● সেখানে তারা বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা শুনতে পাবে না! যে কথাবার্তা হবে তা ঠিকঠাক ও যথাযথ (সম্প্রীতি পূর্ণ) হবে!
{সূরা ওয়াকি'আহঃ আয়াত নং ২৫-২৬}
● সেখানে তারা কোন অপ্রয়োজনীয় তাৎপর্যহীন ও মিথ্যা কথা শুনবে না!
{সূরা নাবাঃ আয়াত নং ৩৫}
জান্নাত হবে অনন্তকালের জন্য এ ব্যাপারে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতের দ্বাররক্ষীগণই সুসংবাদ প্রদান করবে! ইরশাদ হচ্ছেঃ
যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে! অতঃপর যখন তারা সেখানে (প্রবেশ করার জন্যে) আসবে, তখন দ্বাররক্ষীগণ তাদের জন্য দরজাসমূহ খুলে রাখবে এবং জান্নাতীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, আপনাদের প্রতি অবারিত শান্তি বর্ষিত হোক! অনন্তকালের জন্য এখানে প্রবেশ করুন!
{সূরা যুমারঃ আয়াত নং ৭৩}
জান্নাতীদের আর মৃত্যু হবে না; যদিও আমারা মৃত্যুকে ভীতির চোখে দেখি এবং মৃত্যু থেকে পালিয়ে বেড়াবার ব্যর্থ প্রয়াস করি, এই ভীতিকর অবস্থা থেকে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি থাকবে জান্নাতীদের জন্য! মহান আল্লাহ বলেনঃ
● সেখানে তারা আর কখনো মৃত্যুর মুখোমুখি হবে না; পৃথিবীতে একবার যে মৃত্যু হয়েছে সেটাই তাদের জন্য যথেষ্ট! আর আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেবেন!
{সূরা দোখানঃ আয়াত নঃ ৫৬}
● নবী করীম (ﷺ) বলেছেন:
যখন জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন এক ঘোষক ঘোষণা করবে; হে জান্নাতীগণ! এখন আর তোমরা কোনোদিন অসুস্থ হয়ে পড়বে না! সর্বদা সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান থাকবে! কোনদিন আর তোমাদের মৃত্যু হবে না, অনন্তকাল জীবিত থাকবে! সর্বদা যুবক হয়ে থাকবে কখনো বুড়ো হবে না! সর্বদা অফুরন্ত নেয়ামত ভোগ করবে কোনোদিন তা শেষ হবে না এবং কখনো দুঃখ ও অনাহারে থাকবে না!
{সহিহ মুসলিম: ২৮৩৭; তিরমিযী: ৩২৪৬}
জান্নাতীদের চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং তারা হবে ৬০ হাত লম্বা:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
জান্নাতে প্রবেশকারী ১ম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার রাতের উজ্জ্বল চাঁদের আলোর মতো! পরবর্তী দলগুলোর চেহারা হবে উজ্জ্বল জ্যোতিস্কের মতো! তাদের পেশাব-পায়খানা নাকের শ্লেষ্মা ও থুথু হবে না! চিরুনী হবে সোনার, ঘাম হবে মেশকের মতো সুঘ্রাণ, আগর কাঠের সুঘ্রাণযুক্ত ধোঁয়া বিতরণ করা হবে, স্ত্রীরা হবে আয়াতলোচনা, সবার চরিত্র এক ও অভিন্ন এবং আকৃতি হবে তাদের পিতা আদমের মতো ৬০ হাত লম্বা!
{সহিহ বুখারী: ৬২২৭; সহিহ মুসলিম: ২৮৪১}
জান্নাতের প্রশস্ততা হবে আসমান ও যমীনের সমান! এই সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্ততা হবে আসমান-যমীনের সমান; যা মুত্তাকীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে!
{সূরা আলে-ইমরানঃ আয়াত নং ১৩৩}
জান্নাতের দরজাসমূহ সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
● স্থায়ী জান্নাত, তাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তারাও! আর ফেরেশতাগণ তাদের কাছে উপস্থিত হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে এবং বলবে, তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; আর আখেরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম!
{সূরা আর-রাদঃ আয়াত নং ২৩-২৪}
● এ এক স্মরণ! মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস চিরস্থায়ী জান্নাত! যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত!
{সূরা সাদঃ আয়াত নং ৪৯-৫০}
জান্নাতের স্তরসমূহ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
● আর যে কেউ তাঁর (আল্লাহর) কাছে আসবে সৎকর্ম করে, তাদের জন্যই থাকবে উচ্চতম মর্যাদা!
{সূরা ত্বা-হাঃ আয়াত নং ৭৫}
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেনঃ
● হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে যখন বলা হয়; বৈঠক প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা তা প্রশস্ত করে দিবে, আল্লাহ তোমাদেরকে প্রশস্ততা দান করবেন! আর যখন বলা হয়; তোমরা উঠে যাও, তখন তোমরা উঠে যাবে! তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন; আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার খবর রাখেন!
{সূরা আল-মুজাদালাঃ আয়াত নং ১১}
নিম্নতম জান্নাতীর মর্যাদা সম্পর্কে মুগীরা ইবন শো‘বা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
একবার মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর প্রতিপালককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জান্নাতে সবচেয়ে নিম্নস্তরের লোকটি কে হবে?
আল্লাহ বললেন: সে হল এমন এক ব্যক্তি, যে জান্নাতবাসীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে! তাকে বলা হবে, জান্নাতে প্রবেশ কর! সে বলবে; হে প্রতিপালক! তা কিরূপে হবে? জান্নাতীগণ তো নিজ নিজ আবাসের অধিকারী হয়ে গেছেন! তারা তাদের প্রাপ্য নিয়েছেন! তাকে বলা হবে; পৃথিবীর কোনো সম্রাটের সাম্রাজ্যের সমপরিমাণ সম্পদ নিয়ে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে? সে বলবে; হে প্রভু! আমি এতে খুশি! আল্লাহ বলবেন; তোমাকে উক্ত পরিমাণ সম্পদ দেয়া হল, সাথে দেয়া হল আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ, আরও সমপরিমাণ; পঞ্চমবারে সে বলে উঠবে, আমি পরিতৃপ্ত, হে আমার রব! আল্লাহ বলবেন: আরও দশগুণ দেয়া হল! এ সবই তোমার জন্য! তাছাড়া তোমার জন্য রয়েছে এমন জিনিস, যার দ্বারা মন তৃপ্ত হয়, চোখ জুড়ায়! লোকটি বলবে; হে আমার প্রভু! আমি পরিতৃপ্ত!
মূসা আলাইহিস সালাম বললেন; হে আমার রব! তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ কে? আল্লাহ তাআলা বলবেন; এরা তারাই, যাদের মর্যাদা আমি নিজহাতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তার উপর মোহর করে দিয়েছি; এমন জিনিস তাদের জন্য রেখেছি, যা কোন চক্ষু কখনও দেখেনি, কোন কান কখনও শুনে নি এবং কারও অন্তরে কখনও কল্পনারও উদয় হয় নি!
জান্নাতীদের মর্যাদাভেদে জান্নাতের প্রকারভেদ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে জান্নাতীদেরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
১) ডান দিকের লোক! ২) অগ্রবর্তী লোক!
ইরশাদ হচ্ছেঃ
● অতঃপর ডান দিকের লোক! ডান দিকের লোকের (সৌভাগ্যের কথা) কি বলা যায়?
{সূরা ওয়াকি‘আহঃ আয়াত নং ০৮}
● আর অগ্রবর্তী লোকেরা তো (সকল ব্যাপারে) অগ্রবর্তীই! তারাই তো সান্নিধ্যশালী লোক!
{সূরা ওয়াকি‘আহঃ আয়াত নং ১০-১১}
জান্নাতীদের জন্য থাকবে উষ্ণ সম্বর্ধনা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
মোত্তাকীদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে! যখন তারা মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে, জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে এ বলে অভ্যর্থনা জানাবে, তোমাদের প্রতি সালাম, শুভেচ্ছা, তোমরা সুখে থাকো এবং সর্বদা বসবাসের জন্য তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করো! তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি আমাদের প্রতি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এ ভূমির উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন! আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বসবাস করবো! মেহনতকারীদের পুরস্কার কতই না চমৎকার!
{সূরা যুমারঃ আয়াত নং ৭৩-৭৪}
জান্নাতীদের বাসস্থান ও নির্ঝরিণী সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ
যারা মোত্তাকী, তাদের জন্য রয়েছে কক্ষের উপর কক্ষ (বহুতল ভবন) এবং এর নীচে নির্ঝরিণী প্রবাহিত! আল্লাহ নিজ ওয়াদা কখনও ভঙ্গ করেন না!
{সূরা যুমারঃ আয়াত নং ২০}
জান্নাতে থাকবে সকল প্রকার মজাদার খাবার ডিশ ও ফল-ফলাদি! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
হে আমার বান্দাগণ; তোমাদের আজ কোনো ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিত ও পেরেশান হবে না! তোমরা আমার আয়াতসমূহের বিশ্বাস স্থাপন করেছিলে এবং তোমরা আমার আজ্ঞাবহ ছিলে! জান্নাতে প্রবেশ করো তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে! তাদের কাছে সোনার তৈরি ডিশ ও পানপাত্র পেশ করা হবে এবং সেখানে রয়েছে মন যা চায় এবং নয়ন যাতে তৃপ্ত হয়! তোমরা সেখানে চিরকাল থাকবে! এই যে জান্নাতের তোমরা উত্তরাধিকারী হয়েছো, এটা তোমাদের কর্মের ফল! সেখানে তোমাদের জন্য আছে প্রচুর ফল-মূল, তা থেকে তোমরা খাবে!
{সূরা যুমারঃ আয়াত নং ৬৮-৭৩}
জান্নাতে যা পেতে ইচ্ছে করবে তাই পাবে এবং ইচ্ছে হওয়া মাত্রই সে জিনিস তার সামনে উপস্থিত পাবে! এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা সাক্ষ্য দিচ্ছেনঃ
● সেখানে তোমরা যা কিছু চাও এবং যা ইচ্ছে করবে সাথে সাথে তাই হবে! এটা হচ্ছে ক্ষমাশীল ও দয়াবান আল্লাহর তরফ হতে মেহমানদারী!
{সূরা হা-মীম আস-সিজদা: আয়াত নং ৩০-৩১}
● এবং আমি জান্নাতীদেরকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ফল ও গোশত প্রদান করতে থাকবো!
{সূরা আত-তূর: আয়াত নং ২২}
● এবং সেখানে তাদেরকে (নিয়মিতভাবে) সকাল সন্ধ্যা খাদ্য পরিবেশন করা হবে!
{সূরা মারইয়াম: আয়াত নং ৬২}
জান্নাতের নিয়ামত হবে অসীম এবং সুখ-সম্ভার কোনোদিন শেষ হবে না! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
● তাদের জন্য কাটাবৃক্ষসমূহ, থরে থরে সাজানো কলা, বিস্তীর্ণ অঞ্চলব্যাপী ছায়া, সর্বদা প্রবাহমান পানি, আর খুব প্রচুর পরিমাণ ফল থাকবে! যা কোনদিন শেষ হবে না এবং ভোগ করতে কোন বাঁধা-বিপত্তিও থাকবে না!
{সূরা ওয়াকি‘আহ্: আয়াত নং ২৮-৩০}
● চিরস্থায়ী জান্নাতসমূহ যার দ্বারগুলো তাদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকবে! সেখানে তারা ঠেস দিয়ে বসবে এবং প্রচুর ফল ও পানীয় চেয়ে পাঠাবে, আর তাদের নিকট লজ্জাবনত সমবয়স্কা স্ত্রী থাকবে! এ জিনিসগুলো এমন যা হিসেবের দিন দান করার জন্য তোমাদের নিকট ওয়াদা করা হয়েছে! এটা আমাদের জন্য দেয়া রিযিক, কোনো দিন শেষ হয়ে যাবে না!
{সূরা সদ: আয়াত নং ৫০-৫৪}
সকল জান্নাতীদেরকে আল্লাহ তাআলা পবিত্রা স্ত্রী ও হুরদের সাথে বিয়ে দেবেন! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেনঃ
● তারা সামনা-সামনিভাবে সাজানো সারি সারি আসনের উপর ঠেস দিয়ে বসে থাকবে এবং আমি তাদের সাথে সুনয়না হুরদের বিবাহ দেবো!
{সূরা তুর: আয়াত নং ২০}
● (এসব নিয়ামতের মধ্যে থাকবে) তাদের জন্য সচ্চরিত্রবান ও সুদর্শন স্ত্রীগণ!
{সূরা আর-রাহমান: আয়াত নং ৭০}
● সূরা আল-ইমরানে বলা হয়েছেঃ
যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য এমন উদ্যান সমূহ রয়েছে যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান! আর সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে! সেখানে তাদের জন্য আরও আছে পবিত্রা স্ত্রীগণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি!
জান্নাতী হুরেরা হবে কুমারী এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেনঃ
● আমি জান্নাতী নারীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি! তারপর তাদেরকে চিরকুমারী, কামিনী ও সমবয়স্কা বানিয়েছি!
{সূরা ওয়াকি‘আহ্: আয়াত নং ৩৫-৩৮}
● তাদেরকে (জান্নাতীদের) পূর্বে কোনো মানুষ অথবা জ্বীন স্পর্শ করে নি!
{সূরা আর-রাহমান: আয়াত নং ৫৬}
জান্নাতের হুরেরা হবে আবরণে রক্ষিত উজ্জ্বল মণি-মুক্তার মতো সুন্দরী! আল্লাহ বলেনঃ
● হুরের উদাহরণ হলো, আবরণে রক্ষিত মুক্তার মতো সুন্দর ও উজ্জ্বল এবং আয়তলোচনা!
{সূরা ওয়াকি‘আহ্: আয়াত নং ২৩}
● তাদের চোখ সর্বদাই অবনত (পবিত্রা যারা অন্যের দিকে তাকায় না), সুন্দর চোখ বিশিষ্ট এবং তারা যেন ডিমের আবরণের ভেতর সুপ্ত উজ্জ্বল!
{সূরা সাফ্ফাত: আয়াত নং ৪৮-৪৯}
● আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন:
জান্নাতীগণের স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কোনো একজন স্ত্রী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি মেরো দেখতো তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যেতো এবং গোটা পৃথিবী সুগন্ধে ভরে যেতো! তার মাথার উড়নাটিও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে দামী!
{সহিহ বুখারী: হাদিস নং ২৭৯৬}
● আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: মোমিনকে জান্নাতে ১শত নারীর সাথে যৌনমিলনের শক্তি দেয়া হবে!
{মুসনাদে আহমাদ: ৪/৩৭১}
● অন্য বর্ণনায় আছেঃ
প্রথম যারা কিয়ামতের দিন জান্নাতে যাবে, তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল দেখা যাবে, আর দ্বিতীয় দল, তারা যেন সৌন্দর্যে আকাশের ধ্রুব তারা, তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী, প্রত্যেক স্ত্রীর উপর থাকবে সত্তরটি কাপড়, তথাপি তার ভেতর থেকেও পায়ের নলার ভিতরের মগজ দৃষ্টিগোচর হবে!
{তিরমিযী, ২৫৩৫}
জান্নাতীরা সোনার খাটে মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে বসবে! আল্লাহ বলেনঃ
● জান্নাতীরা সোনার খাটে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে আরামের সাথে আলাপচারিতা করবে!
{সূরা ওয়াকি‘আহ্: আয়াত নং ১৫-১৬}
● তারা এবং তাদের স্ত্রীরা ছায়ার মধ্যে খাটে হেলান দিয়ে বসবে! সেখানে তাদের জন্য রয়েছে ফল-মুল এবং তারা যা চাবে সবই!
{সূরা ইয়াসিন: আয়াত নং ৫৬}
জান্নাতের হুরদের সুন্দর কণ্ঠের প্রাণ মাতানো সংগীতঃ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, জান্নাতের মধ্যে হুরদের একটি সমষ্টি থাকবে, যারা এমন মধুর সুরে গান গাবে, আল্লাহর কোন সৃষ্টি এত সুন্দর কণ্ঠের গান আর কোনো দিন শোনে নি! তারা এ বলে গাইবে:
আমরা চিরস্থায়ী, কোন দিন খতম হবো না, আমরা চিরসুখী, কোনদিন দুঃখী হবো না! আমরা চিরসন্তুষ্ট, কোন দিন অসন্তুষ্ট হবো না, সুসংবাদ, আমরা যাদের জন্য এবং যারা আমাদের জন্য!
{তিরমিযী, ২৫৬৪}
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জান্নাতী গানের ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি উত্তর দেন; সে সকল গান হবে আল্লাহর হামদ ও গুণ-কীর্তন, প্রশংসা ও স্তুতি!
জান্নাতীদের জন্য হুরের পাশাপাশি খেদমতের জন্য অসংখ্য গিলমান (দাস/সেবক) থাকবে! মহান আল্লাহ বলেনঃ
● আর তাদের (সেবা যত্নে) কাজে নিযুক্ত থাকবে এমন সুন্দর সুশ্রী বালক, তারা যেন (ঝিনুকে) লুকিয়ে থাকা মুক্ত!
{সূরা তুর: আয়াত নং ২৪}
● আর তাদের (সেবার জন্য) নির্ধারিত থাকবে এমন সব বালক যারা চিরদিনই বালক থাকবে! আপনি তাদেরকে দেখলে মনে করবেন এরা যেন ছড়িয়ে দেয়া মুক্তা!
{সূরা দাহর: আয়াত নং ১৯}
জান্নাতীদের জন্য কচিকাঁচা ছোট শিশুদের আপ্যায়ন থাকবে! মহান আল্লাহ বলেনঃ
তাদের কাছে পানপাত্র ও সূরাপূর্ণ পেয়ালা হাতে কচি-কোমল শিশুরা ঘোরাফেরা করবে! আর যা পান করলে মাথা ব্যাথা হবে না এবং বিকারগ্রস্থ হবে না! আর তাদের পছন্দসই ফল-মুল ও রুচিসম্মত পাখীর গোশত নিয়ে আপ্যায়নের জন্য ঘোরাফেরা করবে!
{সূরা ওয়াকি‘আহ্: আয়াত নং ১৭-২১}
জান্নাতীদের দৈহিক গঠন সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
● জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে; তারা থাকবে লোম ও দাড়ি গোঁফ বিহীন, খৎনাবিহীন, সুরমা লাগানো, ত্রিশ অথবা তেত্রিশ বছরের বয়সের!
{তিরমিযী, ২৫৪৫}
● অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
জান্নাতীগণ লোম ও দাড়ি গোঁফ বিহীন হবে, তাদের চোখ থাকবে সুরমায়িত! তাদের যৌবন কোনদিনই বিলুপ্ত হবে না এবং তাদের কাপড় চোপড়ও পুরানো হবে না!
{তিরমিযী, ২৫৩৯}
● হাসান বসরী (রহ) বলেনঃ
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এক বৃদ্ধা আবেদন করলেন; ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দু’আ করে দিন আমি যেনো জান্নাতে যেতে পারি! রাসূল (ﷺ) বললেন: কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না! একথা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে লাগলেন! তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন: বুড়ি শোনো, তুমি যখন জান্নাতে যাবে তখন আর বুড়ি থাকবে না! ষোড়ষী যুবতী হয়েই জান্নাতে প্রবেশ করবে! একথা শুনে বৃদ্ধা খুশী হয়ে চলে গেলো!
{শামায়েলে তিরমিযী, বর্ণনা নং ২০৫, শাইখ আল-আলবানী বর্ণনাটিকে হাসান বলেছেন}
জান্নাতের নদী ও ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে! জান্নাতে মোট চার ধরনের নদী প্রবাহিত হবে:
(১) পানি (২) দু্ধ (৩) মধু (৪) শরাব!
● আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদেরকে শুভ সংবাদ দিন যে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত!
{আল বাকারা: আয়াত নং ২৫}
● মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত; তাতে আছে নির্মল পানির নহরসমূহ, আছে দুধের নহরসমূহ যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ, আছে পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ এবং সেখানে তাদের জন্য থাকবে প্রত্যেক প্রকারের ফলমূল!
{সূরা মুহাম্মদ: আয়াত নং ১৫}
● নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে; উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে!
{আদ দুখান: আয়াত নং ৫১-৫২}
● উভয় উদ্যানে রয়েছে প্রবাহমান দুই প্রস্রবণ!
{আর রাহমান: আয়াত নং ৫০}
● উভয় উদ্যানে আছে উচ্ছলিত দুই প্রস্রবণ!
{আর রাহমান: আয়াত নং ২২}
● অবশ্য মুক্তাকী লোকেরা সেদিন বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারাসমূহের পরিবেষ্টনে অবস্থান থাকবে! তাদের রব তাদেরকে যা দেবে সানন্দে তারা তা গ্রহণ করতে থাকবে! (এটা এজন্য যে) তারা এর আগে মুহসিন (সদাচারী) বান্দা হিসেবে পরিচিত ছিলো!
{সূরা যারিয়াত: আয়াত নং ১৫-১৬}
● জান্নাতের ছায়া তাদের উপর বিস্তৃত হয়ে থাকবে এবং তার ফলসমূহ সর্বদা আয়ত্বের মধ্যে থাকবে!
{সূরা দাহর: আয়াত নং ১৪}
● মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন:
নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে থাকবে পানির সমুদ্র, মধুর সমুদ্র, দুধের সমুদ্র এবং মদের সমুদ্র; অতঃপর নদী-নালার ব্যবস্থা করা হবে!
{তিরিমিযী, ২৫৭১}
জান্নাতের প্রাসাদ, কক্ষ ও তাঁবুসমূহ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
● আরও ওয়াদা দিচ্ছেন, উত্তম বাসস্থানের, স্থায়ী জান্নাতসমূহে!
{সূরা আত-তাওবাহ: আয়াত নং ৭২}
● আর তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে!
{সূরা সাবা: আয়াত নং ৩৭}
● তারাই, যাদেরকে প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল! আর তারা প্রাপ্ত হবে সেখানে অভিবাদন ও সালাম!
{সূরা আল-ফুরকান: আয়াত নং ৭৫}
● তবে যারা তাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য আছে বহু প্রাসাদ যার উপর নির্মিত আরো প্রাসাদ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত; এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি, আল্লাহ প্রতিশ্রুতির বিপরীত করেন না!
{সূরা যুমার: আয়াত নং ২০}
● তারা হূর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা!
{সূরা আর-রাহমান: আয়াত নং ৭২}
● আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: জান্নাতে মোমিনের জন্য মুক্তার তৈরি তাঁবু থাকবে! এর দৈর্ঘ্য হবে ৬০ মাইল! সেখানে মোমিনদের পরিবার থাকবে! তারা তাদের কাছে আসা-যাওয়া করবে, একে অপরকে দেখতে পারবে না!
{বুখারী: ৪৮৭৯; মুসলিম: ১৮০}
● আনাস ইবন মালেক থেকে বর্ণিত; তিনি মিরাজের হাদীস বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বরাত দিয়ে বলেন: জিবরীল আমাকে সিদরাতুল মোনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলো! এরপর অজ্ঞাত রং দ্বারা চতুর্দিক আবৃত হয়ে গেলো! পরে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো! সেখানে মুক্তার তৈরি তাঁবুসমূহ রয়েছে! এগুলোর মাটি হচ্ছে মেশক!
{বুখারী, ৩৪৯; মুসলিম, ১৬৩}
● রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: জান্নাতের ইট হলো সোনা ও রূপার, মাটি হলো মেশক, কংকর হলো মুক্তা ও ইয়াকুত, মাটি হলো যাফরান! যে প্রবেশ করবে সে সুখে থাকবে, দুঃখী হবে না, চিরস্থায়ী হবে, মৃত্যু বরণ করবে না, পোশাক পুরাতন হবে না এবং যৌবন শেষ হবে না!
{তিরমিযী, ২৫২৬; মুসনাদে আহমাদ ২/৩০৪}
জান্নাতের বৃক্ষ ও বিহঙ্গকুল সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
● আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যাতে আছে কাঁটাহীন কুলগাছ এবং কাঁদি ভরা কলা গাছ; আর সম্প্রসারিত ছায়া; আর সদা প্রবাহমান পানি এবং প্রচুর ফলমূল!
{সূরা ওয়াকি‘আহ্: আয়াত নং ২৭-৩২}
● আর যে তার রবের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দুটি উদ্যান! কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? উভয়ই বহু শাখা-পল্লববিশিষ্ট!
{সূরা আর-রাহমান: আয়াত নং ৪৬-৪৮}
● এ উদ্যান দুটি ছাড়া আরো দুটি উদ্যান রয়েছে! কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে? ঘন সবুজ এ উদ্যান দু’টি!
{সূরা আর-রাহমান: আয়াত নং ৬২-৬৪}
● নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে!
{সূরা আল-মুরসালাত: আয়াত নং ৪১}
● আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে এমন একটি বৃক্ষ হবে, যার ছায়ার মাঝে একজন আরোহী একশ বছর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারবে, তবুও বৃক্ষের ছায়াকে অতিক্রম করতে পারবে না! যদি তোমরা চাও, তাহলে তোমরা পাঠ কর: (আর সম্প্রসারিত ছায়া এবং সদা প্রবাহমান পানি)!
● অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
জান্নাতে এমন কোন বৃক্ষ নেই যার শাখা প্রশাখা স্বর্ণের নয়!
{তিরমিযি: ২৫২৫}
● রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ জান্নাতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট উটের ন্যায় পাখীও আছে! যারা সর্বদা জান্নাতের বৃক্ষারাজীর মধ্যে বিচরণ করে বেড়াবে! আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু শোনে আরজ করলেন; ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা তো খুব আনন্দময় ও সুখময় জীবন যাপন রত! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: সেগুলো ভক্ষণকারীরা সেখানে আরো উত্তম জীবন যাপন করবে! একথা তিনি তিনবার বললেন!
{মুসনাদে আহমদঃ ৩/২৩৬}
জান্নাতীদের আসবাবপত্র সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
● তাদের সম্মুখে রৌপ্য নির্মিত পাত্র ও কাঁচের পেয়ালা আবর্তিত করানো হবে! সে কাঁচ যা রৌপ্য জাতীয় হবে এবং সেগুলোকে পরিমাণ মতো ভরতি করে রাখা হবে!
{সূরা দাহরঃ আয়াত নং ১৫-১৬}
● তাদের সামনে সোনার থালা ও পান পাত্র আবর্তিত হবে এবং মন ভুলানো ও চোখ জুড়ানো জিনিসসমূহ সেখানে বর্তমান থাকবে! তাদেরকে বলা হবে এখন তোমরা চিরদিন এখানে থাকবে!
{সূরা যুখরুফঃ আয়াত নং ৭০}
● নবী করীম (ﷺ) বলেছেনঃ জান্নাতের মধ্যে এমন বালাখানা আছে (স্বচ্ছতার কারণে) যার ভেতরের অংশ বাইরে থেকে এবং বাইরের অংশ ভেতর থেকে দেখা যায়!
{মুসনাদে আহমাদঃ ২/১৭৩}
● তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের তৈরি, তাদের ধুপদানী সুগন্ধী কাঠ দিয়ে জ্বালানো হবে!
{সহিহ বুখারীঃ ৩২৪৫; মুসলিমঃ ২৮৩৪}
জান্নাতের বাজারের বর্ণনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:
● আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন: জান্নাতে একজন আওয়াজ দানকারী আওয়াজ দিয়ে বলবে; তোমরা এখন থেকে চিরসু্স্থ, কখনও অসুস্থ হবে না; তোমরা এখন থেকে চিরদিন জীবিত, আর মৃত্যু বরণ করবে না, তোমরা এখন থেকে চিরযুবক, আর কোনদিন বৃদ্ধ হবে না, তোমরা এখন থেকে চিরস্থায়ী নিয়ামত ও সুখ-শান্তিতে থাকবে, কখনও দুঃখ-বেদনার সম্মুখীন হবে না!
{সহিহ মুসলিম: ২৮৩৭}
● রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: জান্নাতে একটি বাজার আছে! সেখানে জান্নাতীগণ প্রতি শুক্রবার যাবে! সেখানে উত্তর দিকে হতে মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হয়ে জান্নাতীদের মুখমন্ডল ও পরিধের বস্ত্রাদি সুগন্ধিতে ভরিয়ে দেবে! আর তাদের সৌন্দর্য ও রূপ লাবণ্য পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকবে! সুতরাং তারা অত্যন্ত সুন্দর ও লাবণ্যময় হয়ে নিজেদের স্ত্রী নিকট ফিরে আসবে! স্ত্রীগণ তাদেরকে দেখে বলবে, আল্লাহর শপথ; তোমার যে সৌন্দর্য্য ও লাবণ্যের অধিকারী হয়েছো! আবার পুরুষগণও বলবে, আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের কাছ হতে যাবার পর তোমাদের রূপলাবণ্য ও সৌন্দর্যও অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে!
{সহিহ মুসলিম: ২৮৩৩}
জান্নাতবাসীদের খাদ্য ও পানীয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
● আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফলমূল নিয়ে, আর তাদের ঈপ্সিত পাখীর গোশ্ত নিয়ে!
{সূরা আল-ওয়াকিআহ: আয়াত নং ২০-২১}
● এ এক স্মরণ, আর মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে উত্তম আবাস "জান্নাত", যার দরজাসমূহ তাদের জন্য উন্মুক্ত! সেখানে তারা আসীন হবে হেলান দিয়ে, সেখানে তারা বহুবিধ ফলমূল ও পানীয় চাইবে!
{সূরা সদ: আয়াত নং ৪৯-৫১}
● নিশ্চয় সৎকর্মশীলেরা পান করবে এমন পূর্ণপাত্র-পানীয় থেকে যার মিশ্রণ হবে কাফূর; এমন একটি প্রস্রবণ যা থেকে আল্লাহ্র বান্দাগণ পান করবে, তারা এ প্রস্রবণকে যথেচ্ছা প্রবাহিত করবে!
{সূরা আল-ইনসান: আয়াত নং ০৫-০৬}
● কেউ মন্দ কাজ করলে সে শুধু তার কাজের অনুরূপ শাস্তিই প্রাপ্ত হবে! আর যে পুরুষ কিংবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে তবে তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে দেয়া হবে অগণিত রিযিক!
{সূরা গাফের: আয়াত নং ৪০}
● স্বর্ণের থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে; সেখানে মন যা চায় এবং যাতে নয়ন তৃপ্ত হয় তাই থাকবে! আর সেখানে তোমরা স্থায়ী হবে!
{সূরা যুখরুফ: আয়াত নং ৭১}
● মুত্তাকী লোকেরা সেখানে বাগানসমূহে ও নিয়ামত সম্ভারের মধ্যে অবস্থান করবে! মজা ও স্বাদ আস্বাদন করতে থাকবে সে সব জিনিসের যা তাদের রব তাদেরকে দেবেন! আর তাদের রব তাদেরকে জাহান্নামের আজাব হতে রক্ষা করবেন! (তাদেরকে বলা হবে) খাও এবং পান কর মজা ও তৃপ্তির সাথে! এটা তো তোমাদের সে সব কাজের প্রতিফলন যা তোমরা (পৃথিবীতে) করছিলে!
{সূরা তুর: আয়াত নং ১৭-১৯}
● সেখানে তারা বাঞ্ছিত সুখভোগ লিপ্ত থাকবে! (তাদের অবস্থান হবে) জান্নাতের উচ্চতম স্থানে! যা ফলসমূহের গুচ্ছ ঝুলতে থাকবে! (বলা হবে) খাও এবং পান করো, তৃপ্তি সহকারে! সে সব আমলের বিনিময়ে যা তোমরা অতীত দিনে করেছো!
{সূরা আল হাক্কাহ: আয়াত নং ২১-২৪}
● জান্নাতের ফল দেখতে পৃথিবীর ফলের মতোই হবে! যখন কোন ফল তাদের দেয়া হবে খাবার জন্য, তারা বলবে: এ ধরনের ফল তো আমরা পৃথিবীতেই খেয়েছি!
{সূরা বাকারা: আয়াত নং ২৫}
জান্নাতীদের প্রস্রাব পায়খানার প্রয়োজন হবে না! এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:
● জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: জান্নাতীগণ জান্নাতের খাবার খাবে এবং পানীয় বস্তু পান করবে কিন্তু সেখানে তাদের পায়খানা প্রস্রাবের প্রয়োজন হবে না, এমনকি তাদের নাকে ময়লাও জমবে না! ঢেকুরের মাধ্যমে তাদের পেটের খাদ্র্যদ্রব্য হজম হয়ে মিশকের সুগন্ধির মতো বেরিয়ে যাবে! স্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের মতোই তারা তাসবীহ তাকবীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে!
{সহিহ মুসলিম: ২৮৩৫}
● তাদেরকে পেশাব পায়খানা করতে হবে না, মুখে থুথু আসবে না, আর নাকে কোনরূপ ময়লা জমবে না!
{সহিহ বুখারী: ৩৩২৭; সহিহ মুসলিম: ২৮৩৪}
জান্নাতবাসীদের পোষাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
● সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের!
{সূরা আল হাজ্জ: আয়াত নং ২৩}
● সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা পরবে সূক্ষ্ম ও পুরু রেশমের সবুজ বস্ত্র, আর তারা সেখানে থাকবে হেলান দিয়ে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম বিশ্রামস্থল!
{সূরা আল-কাহাফ: আয়াত নং ৩১}
● তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়!
{সূরা আল ইনসান: আয়াত নং ২১}
● তারা সবুজ গালিচা ও সুন্দর সুরঞ্জিত শয্যায় এলায়িতভাবে অবস্থান করবে!
{সূরা আর রহমান: আয়াত নং ৭৬}
জান্নাতের বিছানা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
● সেখানে থাকবে উন্নত শয্যাসমূহ, আর প্রস্তুত থাকবে পানপাত্র, সারি সারি উপাধান এবং বিছানা গালিচা!
{সূরা আল গাশিয়া: আয়াত নং ১৩-১৬}
● সেখানে তারা হেলান দিয়ে বসবে এমন ফরাশে যার অভ্যন্তরভাগ হবে পুরু রেশমের! আর দুই উদ্যানের ফল হবে কাছাকাছি!
{সূরা আর রাহমান: আয়াত নং ৫৪}
● তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার উপরে!
{সূরা আর রাহমান: আয়াত নং ৭৬}
জান্নাতবাসীদের অলঙ্কার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
● সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা এবং সেখানে তাদের পোষাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের!
{সূরা আল হাজ্জ: আয়াত নং ২৩}
● তাদের আবরণ হবে সূক্ষ্ম সবুজ রেশম ও স্থূল রেশম, আর তারা অলংকৃত হবে রৌপ্য নির্মিত কংকনে, আর তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়!
{সূরা আল ইনসান: আয়াত নং ২১}
জান্নাতীদের সৌন্দর্য ও সম্প্রীতি সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বলা হয়েছেঃ
● রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন:
যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো সুন্দর ও উজ্জল হবে! তাদের পর যারা প্রবেশ করবে তাদের চেহারা হবে আকাশের সর্বাধিক আলোকউজ্জল তারকার মতো জ্যোর্তিময়! আর সকলের অন্তকরণ একটি অন্তকরণ সাদৃশ হবে! তাদের মধ্যে পারস্পারিক মতভেদ বা বৈপরিত্য থাকবে না!
{বুখারী: ৩২৪৬; মুসলিম: ২৮৩৪}
● আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেন:
আমি তাদের অন্তর থেকে ঈর্ষা ও বৈরিতা দূর করে দেবো! তারা ভাইয়ের মতো পরস্পর মুখোমুখি হয়ে আসন সমূহে সমাসীন থাকবে!
{সূরা আল-হিজর: আয়াত নং ৪৭}
জান্নাতীগণ জান্নাতী বাপদাদা, স্ত্রী ও সন্তানসহ একান্নবর্তী পরিবারের ন্যায় বসবাস করবে! মহান আল্লাহ বলেনঃ
● যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের সন্তানও ঈমানের কোন মাত্রায় তাদের পদাংক অনুসরণ করেছে, তাদের সে সন্তানদেরকে আমরা (জান্নাতে) তাদের সাথে একত্রিত করবো, আর তাদের আমলে কোন কম করা হবে না!
{সূরা তুর: আয়াত নং ২১}
● তারাতো চিরন্তন জান্নাতে প্রবেশ করবেই, তাদের সাথে তাঁদের বাপ-দাদা, তাদের স্ত্রী এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা সৎ ও নেককার তারাও তাদের সাথে সেখানে (জান্নাতে) যাবে! ফেরেশতাগণ চারদিক হতে তাদেরকে সম্বর্ধনা দিতে আসবে এবং বলবে তোমাদের প্রতি শান্তি!
{সূরা রা‘দ: আয়াত নং ২৩}
জান্নাতে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান! মহান আল্লাহ বলেনঃ
● নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের আতিথেয়তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফিরদাউস। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, সেখান থেকে তারা স্থানান্তরিত হতে চাইবে না!
{সূরা আল-কাহাফ: আয়াত নং ১০৭-১০৮}
জান্নাতীগণের সর্বাধিক বড় নিয়ামত হল তারা আল্লাহর দর্শন লাভ করবে! আল্লাহ বলেনঃ
● সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে! তারা তাদের রবের প্রতি তাকিয়ে থাকবে!
{সূরা কিয়ামাহ: আয়াত নং ২২-২৩}
● নবী করীম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন; আল্লাহর কসম, জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর দর্শন ব্যতিরেকে অধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় আর কিছু হবে না!
{মুসলিম: ১৮১; তিরমিযী: ২৫৫২}
● মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ জান্নাতবাসীদের বলবেন, হে জান্নাত বাসীগণ! তারা বলবে হে আমাদের প্রভূ, আমরা উপস্থিত! সমস্ত মঙ্গল ও কল্যাণ আপনার হাতে! (কি আদেশ বলুন!) আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমরা কি তোমাদের আমলের প্রতিদান পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা (জান্নাতীগণ) জবাব দিবে হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন সব নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি! তখন আমরা সন্তুষ্ট হবো না কেনো? তখন আল্লাহ বলবেন আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও অধিক উত্তম ও উন্নত জিনিস দান করবো না? তারা বলবে এর চেয়ে অধিক ও উত্তম বস্তু আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন আমি চিরকাল তোমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো! কোনদিন আর অসন্তুষ্ট হবো না!
{বুখারী: ৬৫৪৯; মুসলিম: ২৮২৯}
● সোহাইব ইবন সেনান আর-রূমী থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন; জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও, তাহলে আমি তা বাড়িয়ে দেবো? তারা উত্তরে বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেন নি, আমাদেরকে কি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাননি? এরপর আল্লাহ নিজের নূরের পর্দা খুলে ফেলবেন! আল্লাহর অতিশয় সুন্দর সত্তার প্রতি দৃষ্টি দান অপেক্ষা তাদেরকে জান্নাতের আর কোন উত্তম নিয়ামত দেয়া হয় নি!
{মুসলিম: ১৮১}
জান্নাতীদেরকে অসংখ্য ও অগণিত নিয়ামত দেয়া হবে! আল্লাহ এক সাথে অনেক নিয়ামতের উল্লেখ করেছেনঃ
● এবং তাদের সবর ও ধৈর্যের বিনিময়ে তাদেরকে দেবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক-আশাক! তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে! সেখানে রোদের তাপ ও শীতের ঠান্ডা অনুভব করবে না! আর গাছের ছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং ফলসমূহ তাদের আয়ত্বে রাখা হবে! তাদেরকে খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং স্ফুটিকের মতো পানপাত্রে! পরিবেশনকারীরা তা পরিমাণ করে পূর্ণ করবে! তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে, ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পানপাত্র! এটা জান্নাতে অবস্থিত ‘সালসাবীল’ নামক একটি ঝর্ণা! আর তাদের কাছে আনাগোনা করবে চির কিশোরগণ! আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মণি-মুক্তা! আপনি যখন সেখানে দেখবেন, তখন নিয়ামতরাজি ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন! তাদের পোশাক হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করানো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকন এবং তাদের প্রতিপালক তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়! এটা তোমাদের প্রতিদান! তোমাদের আমল ও কাজ স্বীকৃতি লাভ করেছে!
{সূরা আদ-দাহর: আয়াত নং ১২-২২}
জান্নাত চাইতে হবে আল্লাহর কাছেঃ
● রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন; তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইবে তখন জান্নাতুল ফেরদৌস চাইবে! সেটাই মধ্যম ও সর্বোচ্চ জান্নাত!
জান্নাত সর্বাধিক মূল্যবান জিনিস! তাই তা সংগ্রহের আপ্রাণ ও জোরদার চেষ্টা চালানো উচিত! তাকওয়া মূলত: জান্নাত লাভের উপায় এবং তা অর্জনের জন্য বাস্তব চেষ্টা ও পরিশ্রমের বাস্তব প্রশিক্ষণ!
মহান আরশে আযীমের অধিপতি, জগতসমূহের স্রষ্টা এবং একচ্ছত্র মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার অনন্য সুন্দর নামসমূহ, তাঁর সুউচ্চ মর্যাদা, ইযযত, আজমত ওয়াল জালাল, তাঁর মহত্ম, বড়ত্ব এবং গুণাবলীর অসীলায় আমরা তাঁর নিকট জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করছি! হে আল্লাহ, হে মালিক, হে জান্নাত-জাহান্নামের মালিক, হে আশ্রয়দাতা, হে মুক্তিদাতা, হে ক্ষমাশীল, হে দয়াশীল, আপনি আমাদের হৃদয়ের গহীন থেকে উৎসারিত আন্তরিক দুআ কবুল করুন! আমীন! ইয়া আরহামার র-হিমীন!!!
রেফারেন্সঃ
● কোরআনের আয়াত নং ও বাংলা অর্থ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে!
● হাদিস নং ও বাংলা অর্থ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে!
● কন্টেন্ট সমূহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমিক ভাবে সাজানো হয়েছে!
Tags:
Islamic-Articles